বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

আবার অস্থির ডলারের বাজার

আবার অস্থির ডলারের বাজার

স্বদেশ ডেস্ক:

আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ডলারের বাজারে। প্রায় দুই মাস স্থির থাকার পর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়ে গেছে প্রায় ২০ পয়সা। গতকাল আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ওঠে ৮৬ টাকায়। গত ৫ মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ১ টাকা ২০ পয়সা। আন্তঃব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে ডলারের দাম আরও চড়া। এই বাজারে প্রতি ডলার কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৯১ টাকা। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য এখন প্রায় ৫ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই পার্থক্য আড়াই থেকে ৩ টাকার মধ্যে থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে আমদানিতে ডলারের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধিতে গত আগস্ট থেকেই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম। ফলে প্রতিনিয়ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে।

সাধারণত ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারক ও রেমিটাররা উৎসাহিত হন। কারণ তারা আগের থেকে বিনিময়মূল্য বেশি পান। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারক ও সাধারণ মানুষ। কারণ ডলারের দাম বাড়লে আমদানি খরচও বেড়ে যায়। আমদানি খরচ বাড়লে পণ্যমূল্যও বাড়ে। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। এর প্রভাবে চড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতেও।

দেশে কয়েক মাস ধরে অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি। মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেলসহ সব পণ্যের আমদানিই এখন বেশ ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে বিভিন্ন পণ্যের এলসি বেড়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ। ফলে আমদানিতে ডলারের চাহিদা বেশ বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংকের কাছে ডলার আসার উৎস রেমিট্যান্স গত মে থেকে টানা কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধি হলেও আমদানি বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। যেমন- অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমদানি চাহিদা বৃদ্ধিতে ডলারের দাম বাড়ছে। গত কয়েক মাস আমাদের আমদানি অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। কিন্তু একই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে গেছে। এ কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, আমদানিতে ডলারের চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকে ডলারের কোনো সংকট নেই। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যে গতি এসেছে তা আমদানি বাড়ার চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮১ পয়সায় বিক্রি হয়, যা বাড়তে বাড়তে গত ১১ নভেম্বর ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠে। এরপর টানা প্রায় দুই মাস আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়েনি। এ কারণ ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে বাজারে ডলার বিক্রি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডিসেম্বর মাসে ডলার বিক্রি কিছুটা কমিয়ে আনায় জানুয়ারির দেড় সপ্তাহ যেতেই আন্তঃব্যাংক আবার ডলারের দাম বাড়ল। গতকাল ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয় ৮৬ টাকায়। এর আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। ফলে একদিনের ব্যবধানেই ডলারের দাম বাড়ল ২০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্টের পর থেকে একদিনে ২০ পয়সা ডলারের দাম বৃদ্ধির ঘটনা প্রথমবার ঘটল। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর একদিনে ১২ পয়সা বেড়েছিল। বাকি সময়ে বৃদ্ধির গতি ছিল ১ পয়সা, ২ পয়সা, ৪ পয়সা, ৫ পয়সা ও ১০ পয়সা।

দীর্ঘদিন ধরে খোলাবাজারেও বেশ চড়া ডলারের দাম। গতকাল মানি চেঞ্জারগুলো ক্রেতাদের কাছে ৯০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯১ টাকার মধ্যে ডলার বিক্রি করেছে। আর ডলার কিনেছে ৯০ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৯০ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে। জানতে চাইলে মানি চেঞ্জিং হাউসের মালিক এমএস জামান আমাদের সময়কে বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর আগের চেয়ে বেশি লোক দেশের বাইরে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সে তুলনায় যাত্রীদের মাধ্যমে হাতে হাতে দেশে ডলার আসছে কম। ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি।

গত আগস্ট থেকে আমদানিতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির পর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসেও ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ৫ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করেছে প্রায় ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ। এর পরও ডলারের দাম বাড়ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877